পৃথিবীর আবর্তন গতি কাকে বলে | What is the speed of Earth's rotation

পৃথিবীর আবর্তন গতি কাকে বলে


সূর্যকে সামনে রেখে পৃথিবী নিজেও অক্ষকে বেষ্টন করে নির্দিষ্ট গতিতে পশ্চিম দিকে পূর্ব দিকে ঘুরছে একই পৃথিবীর আবর্তন গতি বলে।

আবর্তন গতির অপর নাম আহ্নিক গতি : 

পৃথিবীর নিজ অক্ষ বা মেরুদন্ডের চারিদিকে সম্পন্ন এক পাক আবর্তন করতে সময় লাগে ২৪ ঘন্টা ১ দিন বা ধরা হয়। পৃথিবীর আবর্তনের ফলে দিন-রাত্রি হয় বলেই পৃথিবীর আবর্তন গতির নাম আহ্নিক গতি । 

আমরা পৃথিবীর আবর্তন অনুভব করি না কেন : 

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে আবর্তন বেগের তারতম্য থাকলেও আমরা এই আবর্তনকে বুঝতে পারি না। আমরা যেখানে বাস করছি তার পারপাসিক পরিবেশ অর্থাৎ বাড়ি ঘর গাছপালা মাঠ ঘাট সবই পৃথিবীর সাথে আবর্তন করে চলেছে।। তাই আমরা পৃথিবীর আবর্তন অনুভব করতে পারি না। তবে পৃথিবীর আবর্তনের প্রভাব পৃথিবীর সমস্ত বস্তুরী ছিটকে যাওয়ার কথা কিন্তু অভিকর্ষজ বলের কারণে কোন বস্তুর স্থান পরিবর্তন ঘটে না।

পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রমাণ : 

পৃথিবী যে নিজ অক্ষকে বেষ্টন করে পশ্চিম থেকে পড়বে আবর্তন করছে তা বিভিন্নভাবে প্রমাণ করা যায় যেমন।

1) অন্যান্য গ্রহের আবর্তন : 

পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে দেখা গেছে যে অন্যান্য গ্রহগুলি নিজ অক্ষের চারিদিকে আবর্তন করছে। পৃথিবী অন্যান্য উপগ্রহ গুলির মতে সূর্য থেকে সৃষ্ট। তাই পৃথিবী আবর্তন করবে এটাই স্বাভাবিক।

2) উপগ্রহ প্রেরিত চিত্র : 

পৃথিবী থেকে যে অসংখ্য উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানো হয়েছে সেগুলো থেকে পেরিত চিত্রে পৃথিবীর আবর্তন গতি ধরা যায়। তাছাড়া মহাকাশচারীগণ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে সাহায্যে মহাকাশ থেকে পৃথিবীর আবর্তন গতি লক্ষ্য করেছেন।

3) কৃত্রিম উপগ্রহের অবস্থান ও গতি : 

পৃথিবী থেকে যে সকলকে তিন উপগ্রহ পাঠানো হয়েছে সেগুলোর অবস্থান ও গতিবেগের নির্ধারণ করা হয়েছে পৃথিবীর আবর্তন বেগের উপর ভিত্তি করেই। তাই বলা যায় পৃথিবীর আবর্তন গতি আছে।

4) পৃথিবীর অভিগত গোলীয় আকৃতি :


আবর্তন গতির জন্যই পৃথিবীর নিনিরক্ষীয় প্রদেশ স্ফীত ও মিরুপদেশ চাপা হয়েছে।

5) নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র: 


প্রাচীন পন্ডিত দের ধারণা ছিল মহাবিশ্বে পৃথিবীকেন্দ্রিক অর্থাৎ পৃথিবীকে মাঝখানে রেখেই সূর্য চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহ পরিক্রমণ করে চলেছে। কিন্তু নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র অনুযায়ী কোন বড় বস্তু ছোট বস্তুর চারিদিকে ঘুরতে পারে না। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব 13 লক্ষ গুণ বড়। তাই পৃথিবীর চারপাশে সূর্যের পরিক্রমণ অপেক্ষা পৃথিবীর নিজেও অক্ষের চারিদিকে আবর্তন করছে এটাই স্বাভাবিক ।

তাছাড়া পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব 15 কোটি কিলোমিটার। অতএব পৃথিবীর চারপাশে ২৪ ঘন্টায় সূর্যের একবার পরিক্রমণ করতে গেলে যে গতিবেগ দরকার তা আলোর গতিবেগের চেয়েও বেশি। অথচ আলোর থেকে কোন পদার্থই দ্রুতগামী হতে পারে না।

6) নিশ্চল বায়ুতে প্রস্তর খন্ড নিক্ষেপ : 


বায়ুনিষ্ঠূল অবস্থায় উঁচু স্থান থেকে কোন পাথরের খন্ড নিচের দিকে ফিরলে পৃথিবীর আবর্তনের কারণে লম্বা রেখা বরাবর না পড়ে পূর্ব থেকে একটু এগিয়ে পড়ে।

ফ্রেন্ডসের বুলো  ও জার্মানের হামবর্গ শহরে প্রায় ৭৬.২ মিটার উঁচু স্থান থেকে নিক্ষিপ্ত পাথর খন্ড প্রায় 0 . ৮৪ সেন্টিমিটার পূর্ব দিকে এগিয়ে মাটিতে পড়ে।

7) ফুকোর পরীক্ষা : 


ফরাসি বিজ্ঞানী ফুকো ১৮৫১ সালে প্যারিস শহরে প্যান্থিয়ান গির্জা চুরা থেকে ৬১ মিটার দীর্ঘ তারের সাহায্যে লোহার বল ঝুলিয়ে দেন এবং বলেন নিচে পিন আটকে দেন।

নিচে জমিতে হালকা বালি বিছিয়ে রাখেন। তিনি তারের সাহায্যে বলটিকে এমন ভাবে ঝুলিয়ে দেন যাতে তিনটি বালির উপর হালকা ভাবে ছুঁয়ে থাকে। এইবার বলটি কে উত্তর দক্ষিনে দলিয়ে দেন দিয়ে লক্ষ্য করেন যে দোলকের পেন্টি বালের ওপর দাগ কাটতে কাটতে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে।
একই স্থানে পিনের দাগ পড়ছে না। পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব আবর্তন করছে বলি এরকম ঘটছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন